Header Ads

  • THE COVER

    জীবন ইতিহাস ও জীবন নাট্য




    জীবনের জন্য কোন জ্ঞানটি সবার আগে প্রয়োজন তা নিয়ে যেমন অনাদিকাল থেকে জ্ঞানীরা অনবরত বিতর্ক করে আসছেন তেমন জ্ঞানের জন্য জীবন উৎসর্গ করার বাহারি ধরন ও প্রকৃতির যথার্থতা নিয়েও এযাবৎকালে কম বিতর্ক হয়নি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে প্রাচীন দুনিয়ার এক মহাপণ্ডিত চীনা পর্যটক বর্ণিত একটি কাহিনী শোনাতে চাই। ভদ্রলোকের জ্ঞানের নেশা তাকে সংসারবিরাগী বানিয়ে ফেলেছিল। আজ থেকে চৌদ্দ শ বছর আগে জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি চীন দেশ থেকে বের হয়ে যান। তারপর ইরান-তুরানের বহু শত পাহাড়, নদ-নদী এবং দুর্গম গিরিপথ পাড়ি দিয়ে তৎকালীন ভারতবর্ষের পাটলীপুত্রে এসে হাজির হন। বর্তমান ভারতের পাটনা যখন পাটলীপুত্র নামে অভিহিত তখন তা ছিল ভারতবর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নামিদামি শহর কাম রাজধানী। মগধের রাজা উদয়ন কর্তৃক ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত পাটলীপুত্র উত্তর ভারতের রাজধানীরূপে নন্দ সাম্রাজ্য, মৌর্য সাম্রাজ্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক নগরে পরিণত হলেও প্রাচীন দুনিয়ার জ্ঞানী-বিজ্ঞানী ও জ্ঞানপিপাসুদের কাছে তা তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয় মূলত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে।
    আমাদের আজকের নিবন্ধের আলোচ্য মহাজ্ঞানী চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাঙ পাটলীপুত্র এসে অনুধাবন করলেন যে, তিনি যেরূপ এতকাল নিজেকে যে স্তরের জ্ঞানী ভেবেছেন তা হয়তো তার জন্মস্থান কিংবা ভ্রমণ করা শহর-বন্দর গ্রামের অধিবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— কিন্তু নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তিনি তখন পর্যন্ত ছাত্র হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেননি। সুতরাং কালবিলম্ব না করে তিনি সেখানে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়ে গেলেন এবং বহু বছর অধ্যয়ন শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল অধ্যাপনার চাকরি করে শেষ বয়সে চীন দেশে ফিরে গিয়ে তার ভুবনবিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী রচনা করেন। আমি আজকে যে কাহিনীটি বলব তা হিউয়েন সাঙ তার বইতে উল্লেখ করেছেন। তিনি একবার কর্ণসুবর্ণ নগর যা ইদানীংকালে ভারতের ভাগলপুর নামে পরিচিত সেখানে ভ্রমণে গিয়ে এক অদ্ভুত বিজ্ঞ লোকের সাক্ষাৎ পান। লোকটি অদ্ভুত ও বিচিত্র রঙের পোশাক পরে ঘুরে বেড়াতেন। তার মাথায় বাঁধা থাকত জ্বলন্ত মশাল। তার কোমর পেট থেকে অবধি তামার পাত দ্বারা মোড়ানো থাকত। লম্বা লম্বা পা ফেলে হাতে মস্ত বড় এক লাঠি নিয়ে বুক ফুলিয়ে তিনি হম্বিতম্বি করে শহরময় ঘুরে বেড়াতেন।
    শহরের লোকজন বিজ্ঞ লোকটিকে উন্মাদ মনে করত এবং তার সঙ্গে সুযোগ পেলেই রংতামাশা জুড়ে দিত। কেউ কেউ প্রশ্ন করত— ও মিয়া! তুমি এমন করে পেট বেঁধেছো কেন? দিনের আলোয় তোমার মাথায় মশালই বা জ্বলছে কেন? বিজ্ঞ লোকটি কৌতুকাচ্ছলে উত্তর করতেন— ‘আমার অগাধ জ্ঞান বুদ্ধি যাতে পেটটিকে ফাটিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে গন্ধ ছুটিয়ে লোকজনকে কষ্ট দিতে না পারে সেজন্য শক্ত করে বেঁধে রেখেছি। অন্যদিকে অজ্ঞানতার অন্ধকার দ্বারা যারা নিজের চোখ দুটোকে অন্ধ বানিয়ে দিনের আলোয় পথ চলতে পারে না তাদের জন্য আমি জ্বলন্ত মশাল নিয়ে ঘুরে বেড়াই।’ প্রাচীন ভারতের কর্ণসুবর্ণ নগরের সুধীজনরা বিজ্ঞ লোকটির কথার মর্ম বুঝতে না পারলেও মহাজ্ঞানী হিউয়েন সাঙ ঠিকই বুঝেছিলেন এবং ঘটনাটিকে নিজের বইয়ে লিপিবদ্ধ করে ইতিহাসের অংশ বানিয়ে রেখেছেন অনাগত প্রজন্মের মানুষের জন্য। আজকের শিরোনাম প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই আমার উল্লিখিত কাহিনীটি মনে পড়ল এ কারণে যে, আমাদের সমাজে জ্ঞানীর জ্ঞান বিতরণের ধরন ও প্রকৃতির মধ্যে পর্যাপ্ত সৌজন্যতা, কুশলতা এবং দক্ষতা না থাকলে জ্ঞান প্রায়ই অখাদ্যে পরিণত হয় এবং পরিত্যক্ত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। জ্ঞানের স্থান-কাল-পাত্র এবং জ্ঞানীর মাত্রাজ্ঞান না থাকলে হাজারো বাধাবিপত্তি জ্ঞানকে আবদ্ধ করে ফেলে এবং জ্ঞানীকে সমাজচ্যুত হতে হয়। জীবনের জন্য কোন জ্ঞানটি কখন এবং কীভাবে প্রয়োজন তা না জানলে জ্ঞান যেমন পূর্ণতা পায় না তেমন জ্ঞানের জন্য জীবনের কী কী বিষয় কখন ও কীভাবে বিসর্জন করতে হয় তা না জানলে মানুষের হৃদয়-মনে কোনো দিন জ্ঞান স্থায়ী আবাস গড়ে তুলতে পারে না। আজকের নিবন্ধে জ্ঞানী হওয়ার সাধারণ পূর্বশর্ত এবং জ্ঞান অর্জনের ক্রমিক ধাপগুলো সম্পর্কে সাধ্যমতো ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
    আপনি যদি সত্যিকার জ্ঞানী হতে চান তবে আপনাকে প্রথমেই চরিত্রবান অথবা চরিত্রবতী হতে হবে। বিনয়, ভদ্রতা ও কৃতজ্ঞতা হবে আপনার অন্যতম অলঙ্কার, পরিশ্রম, উত্সুক মন এবং সহজাত বুদ্ধিমত্তা ছাড়া আপনি জ্ঞানের শহরের বাসিন্দা হতে পারবেন না। ধৈর্য, সহ্য এবং সরলতা না থাকলে আপনি জ্ঞানকে ধারণ করতে পারবেন না। কৌশল, দক্ষতা, সময়জ্ঞান এবং সাহস না থাকলে আপনি জ্ঞানকে সুযোগমতো ব্যবহার করতে পারবেন না। হৃদয়ের বিশালতা, ক্ষমা করার ক্ষমতা এবং অপ্রিয় বিষয় ভুলে থাকার নিদারুণ যোগ্যতা না থাকলে আপনার জ্ঞান বিস্মৃতির কবলে পড়ে দিন দিন হ্রাস পেতে থাকবে। সংযম, দিব্যদৃষ্টি, অনুভূতিপ্রবণ ও সহানুভূতিশীল না হলে আপনার জ্ঞান কেউ গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে আসবে না। মোহনীয় ব্যক্তিত্ব, কথা-কর্মের নান্দনিক মাধুর্য এবং পর্যাপ্ত রুচিশীলতা না থাকলে আপনার জ্ঞান লোকারণ্যে বিজ্ঞময় সুগন্ধি ছড়াবে না।
    আলোচনার এই পর্যায়ে চলুন আমরা জ্ঞানের প্রকারভেদ ও ক্রমিক ধাপগুলো সম্পর্কে জেনে নিই। জ্ঞান প্রধানত দুই প্রকার। যথা— জীবনের জন্য জ্ঞান ও জীবিকার জন্য জ্ঞান। আমরা সাধারণত প্রায়ই জীবনের জন্য অপরিহার্য জ্ঞান অর্জন না করে জীবিকার জন্য প্রযোজ্য জ্ঞান হাসিলের জন্য জীবনটা শেষ করে দিই। ফলে যখন আমাদের হুঁশ হয় তখন পৃথিবীর আলো-বাতাস, সম্ভাবনা, সুখ-সম্ভোগ ইত্যাদি সবকিছু আমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে যায় অথবা ক্ষেত্রবিশেষ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য হজরত মুসা (আ.) জমানার একটি উদাহরণ পেশ করছি। আমরা কমবেশি সবাই জানি, হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সরাসরি কথাবার্তা হতো এবং তাঁরা অনেক বিষয়ে অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা করতেন। একবার হজরত মুসা (আ.) আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন— ইয়া আল্লাহ! তুমি যদি বান্দা হতে তবে তুমি তোমার আল্লাহর কাছে সর্বাগ্রে কোন জিনিসটির জন্য প্রার্থনা জানাতে। উত্তরে আল্লাহ জানালেন যে, তিনি অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করতেন।
    আমরা যদি উপরোক্ত উদাহরণটিকে ভিত্তি হিসেবে ধরি তবে সুস্বাস্থ্য অর্জন এবং সুস্বাস্থ্য রক্ষাসংক্রান্ত জ্ঞান আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্জন করা উচিত। মানুষের শরীর-স্বাস্থ্য যদি সুস্থ না থাকে তবে জীবনের সব উপার্জন কিংবা অর্জন মাটি হয়ে যায়। অন্যদিকে শরীর যদি ঠিক না থাকে তবে মানুষ জ্ঞান-গরিমা তো দূরের কথা বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় আহার-নিদ্রা কিংবা বিশ্রামটুকুও ভোগ করতে পারে না। অসুস্থ মানুষের কাছে নিজের জীবন, পরিবার-পরিজনের জীবনসহ পৃথিবীর আলো-বাতাস পর্যন্ত অসহ্য হয়ে ওঠে। সুতরাং পৃথিবীর যে কোনো জ্ঞানের মধ্যে নিজের শরীর-স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জ্ঞানের চর্চা, অনুশীলন ও অনুকরণই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হলো— শরীরসংক্রান্ত কী ধরনের জ্ঞান আপনি অর্জন করবেন। শরীরের মতো বিশাল কারখানা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এটির কলকব্জার যন্ত্রকৌশল বা ইঞ্জিনিয়ারিং, এটির রসায়ন বা ক্যামিস্ট্রি এবং সফটওয়্যারের সঙ্গে তুলনা করা যায় এমন জটিল, অভিনব ও বিস্ময়কর সৃষ্টি আকাশ-বাতাস-আসমান-জমিনের কোথাও নেই। মনুষ্যসৃষ্ট কোনো যন্ত্র তো দূরের কথা বিধাতার অন্যান্য সৃষ্টির সঙ্গেও মানবদেহের ন্যূনতম তুলনা চলে না। কাজেই এ ব্যাপারে বিশেষ জ্ঞানের পরিবর্তে সাধারণ জ্ঞান অর্জনই যথেষ্ট যার শুরুটা হবে হার্ডওয়্যারে থেকে শরীরের হার্ডওয়্যার বলতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, অস্থিমজ্জা, চর্ম ইত্যাদি এবং সফটওয়্যার বলতে মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনাকে বোঝায়। শরীরসংক্রান্ত সাধারণ জ্ঞান বলতে যা বোঝায় তা হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন হওয়া। আহার-নিদ্রা-বাসস্থানের ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করার পাশাপাশি শরীরচর্চা, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সচরাচর রোগবালাইয়ের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার উপায় জানাটা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজে আইন। নিজের শরীর সম্পর্কে কিছু প্রাকৃতিক জ্ঞান মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই পায়। বাকিটা তাকে অর্জন করতে হয়। পৃথিবীর সব সফল, সার্থক এবং স্মরণীয়-বরণীয় মানুষ শরীর সম্পর্কে রীতিমতো বিস্ময়কর পাণ্ডিত্য অর্জন করে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সফলতার পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছিলেন।
    শরীর রক্ষার জ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মন-মানস, চিন্তা-চেতনা এবং কল্পনার জন্যও জ্ঞান অর্জন অতীব জরুরি। শরীরকে যদি আমরা বৃক্ষ হিসেবে বর্ণনা করি তবে সেই বৃক্ষের প্রাণ, ফুল ও ফলের নাম হলো মানুষের মন। সুতরাং কেউ যদি মনকে পরিচালনার জ্ঞান অর্জন না করে তবে তার সুস্থ শরীর ও শক্তি-সামর্থ্য তার জন্য প্রায়ই বিপদ ও বিপত্তি বয়ে নিয়ে আসে। আমরা এ কথা সবাই জানি যে, মানুষের মন ও মস্তিষ্ক যুগপত্ভাবে প্রায়ই দ্বিমুখী চিন্তা করে। বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরস্পরবিরোধী স্বপ্ন দেখে। মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয় আবার পাঁচ রকমের— রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ দ্বারা পাঁচভাবে মন ও মস্তিষ্কের পরস্পরবিরোধী চিন্তা-চেতনা ও স্বপ্নকে প্রভাবিত করে প্রতিটি ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তোলে। নিজের মধ্যকার এতসব জটিল সমীকরণের সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবেশ-পরিস্থিতি, সমাজ-সংসারের নিকটজন-দূরজন, বিশেষজ্ঞ ও জ্ঞানী-গুণীদের নানামুখী বুদ্ধি-পরামর্শ, তাপ-চাপ ইত্যাদি। ফলে এতসব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মানুষের মন ও মস্তিষ্ক কেবল তখনই সঠিক জিনিসটি করতে পারে যখন সেখানে প্রয়োজনীয় জ্ঞান উপস্থিত থাকে।
    শরীর ও মনসংক্রান্ত জ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষের জীবিকাসংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা উচিত। বিষয়টি সহজভাবে বোঝানোর জন্য জীবিকা ও সামঞ্জস্য শব্দ দুটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন। জীবিকা বলতে শুধু পেশা বা আহারকে বোঝায় না। জীবিকা হলো একজন মানুষের পদ-পদবি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদার সমন্বিত রূপ। তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, অলঙ্কার, প্রসাধন, বিনোদন, বিশ্রাম, বিহার প্রভৃতিও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ যে ধরনের মন-মানসিকতা ধারণ করে তার সঙ্গে তার জীবিকার যদি সামঞ্জস্য বা অন্ত্যমিল না থাকে তবে ধরে নেওয়া হয় সে তার জীবিকা অনাহূত অর্থাৎ সে তার অর্জিত জ্ঞান, চাওয়া-পাওয়ার স্বপ্ন ও চেষ্টা-তদবির দ্বারা জীবিকা অর্জন করেনি। পরিস্থিতির কারণে কোনো সুযোগে বা কোনো দুর্ঘটনার কারণে সে জীবিকার উপকরণগুলো পেয়ে গেছে অনেকটা জুয়ার কোর্টের লটারির মতো। ফলে জীবিকার সঙ্গে তার শরীর, মন ও চিন্তার এক ত্রিমুখী সংঘাত তাকে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। যেসব মানুষের মন জ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় তাদের জীবনের কোনো অনাহূত জীবিকার স্পর্শ তো দূরের কথা ওগুলো তাদের ত্রিসীমায় ভিড়তে পারে না।
    জ্ঞান অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ভ্রমণ। এর পরের মাধ্যম হলো অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ। অতিপ্রাকৃত কিছু জ্ঞান রয়েছে যাকে আরবিতে বলা হয় হিক্মা তা অর্জিত হয় ধ্যানের মাধ্যমে। জ্ঞানের শ্রীবৃদ্ধি হয় জ্ঞানীর নিরন্তর পরিশ্রম এবং কঠোর অনুশীলনের কারণে। জ্ঞানের বিস্তার ও বংশ বৃদ্ধি ঘটে নির্জন চিন্তা, গবেষণা এবং জ্ঞানীদের পারস্পরিক আলোচনা ও সলাপরামর্শের মাধ্যমে। জ্ঞানের ভিত্তি রচিত হয় লেখনীর মাধ্যমে এবং সেসব লেখনী সুবাসিত সৌরভ ছড়ায় সাহিত্যের মাধ্যমে। শিল্পকলা, স্থাপত্য, সংগীতের সুর, তাল লয় ও ছন্দ জ্ঞানকে নান্দনিক করে তোলে। সর্বোপরি, সর্বাঙ্গীণ ভালো মানুষের সংস্পর্শে জ্ঞান মধুময় ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে সেসব সাধারণ মানুষের জন্য যারা জ্ঞান অর্জনের জন্য সারাক্ষণ সেভাবে ছুটতে থাকেন যেভাবে একটি মৌমাছি মধু আহরণের জন্য ছুটে বেড়ায়।

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad

    ad728
    Powered by Blogger.