Header Ads

  • THE COVER

    জ-তে জীবন, গ-তে গল্প



    গল্প পড়তে সবারই ভাল লাগে। গল্প তো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। গল্প মানুষকে হাসায় আবার গল্পই মানুষকে কাঁদায়। তাইতো ছোটবেলা থেকেই গল্প পড়া আমার প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। তেমনি গল্প লিখতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় খাতা কলম নিয়ে বসে থাকাতেও ছিল না কোনো বিরক্তির ছাপ। আমার এখনো মনে আছে গ্রামের স্কুলে যখন ক্লাস টু তে পড়তাম তখন টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গল্পের বই কিনে পড়েছি। গল্প পড়ার প্রতি আমার আলাদা একটা ঝোঁক ছিল। আর নিজেও নতুন করে গল্প লিখতে উৎসাহ পেতাম।
    ===============================================================

    প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সব ক্লাসেই ফার্স্ট বয় ছিলাম। তাই স্যাররা আমাকে একটু বেশিই আদর করতেন। পরীক্ষার উত্তরপত্রে উত্তরের উপস্থাপনাটাও নাকি স্যারদেরকে মুগ্ধ করতো। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় থেকেই গল্প লিখতাম। কিন্তু কোথাও প্রকাশ হয়নি। অবশ্য হবেই বা কী করে আমি তখন কোথাও গল্প পাঠাইনি। মনে মনে অনেক স্বপ্নের জাল বুনতাম- একদিন আমার গল্পও পত্রপত্রিকা তে প্রকাশিত হবে, আমার বই হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষার ফল বের হলো- আমি উপজেলাতে তৃতীয় হয়েছি। ৩ নম্বরের জন্য প্রথম আর ২ নাম্বারের জন্য দ্বিতীয় হতে পারিনি। 

    সাপ্তাহিক দিবাকণ্ঠে আমার ফলাফলের খবর প্রকাশিত হলো আর তার সাথে আমার একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। নিজে লেখা গল্প পত্রিকাতে দেখে যতটা খুশি হয়েছি, ঠিক ততটা খুশি হইনি আমার ফলাফলের খবর ছাপা দেখে। ভালো রেজাল্ট করায় উপজেলা থেকে আমাকে পুরষ্কার দেয়া হল। ভেবেছিলাম ২/১ টা বইও থাকবে। কিন্তু বাসায় এসে মোড়ক খুলে কোনো বই পেলাম না। তখন মনে মনে বললাম, এটা না দিয়ে দু'টা গল্পের বই দিলেই বা  কী হতো? বইতো মানুষকে আলোকিত করে। ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। বৃত্তির টাকা দিয়ে গল্পের বই কিনে পড়তাম। 

    গল্প আমাকে বরাবরই আকর্ষণ করতো। সপ্তম শ্রেণিতে ঢাকায় চলে আসলাম। তখন লেখালেখিটা কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবুও গল্প পড়া বন্ধ হয়ে যায় নি। নবম শ্রেণিতে আবার ভর্তি হই আমার গ্রমের হাই স্কুলে। স্কুল ছুটির পর বিকেলে সবাই যখন মাঠে খেলতে যেতো, আমি তখন একা বসে বসে গল্প লেখার চেষ্টা করতাম। গ্রাম্য প্রকৃতির সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে দেখতাম আর আপন মনের অন্তরালে সেই প্রকৃতি একে তাতে চরিত্র সৃষ্টি করে নতুন একটা গল্প সৃষ্টির চেষ্টা বুনতে থাকতাম। একদিন স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ প্রদর্শণীতে গেল। 

    স্কুলে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত বিষয়ও এর তাৎপর্য নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলো এবং সেরা ৩ জনকে পুরস্কৃত করা হবে। আমি প্রদর্শনী নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিলাম এবং সেরা লেখক হিসেবে স্কুল থেকে পুরস্কার পেলাম। পুরষ্কার হিসেবে এ প্রথম বই পেলাম। আমাকে কাজী নজরুল ইসলামের শিউলিমালা, সাম্যবাদীসহ ৫ টি বই দেয়া হল। নতুন বই পেয়ে আমি তো মহাখুশি।

    নতুন বই মানেই তো আলাদা এক অনুভূতি। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিঃশ্বাস ভরে নেয়ার মাঝে আনন্দ থাকে। স্কুলের ক্রোড়পত্র পত্রিকাতে দেয়া হলে আমার লেখা ছাপা হয়েছিল। তারপর থেকেই স্থানীয় পত্রিকাতে লেখালেখি শুরু করলাম। প্রথমদিকে লেখা পাঠালে প্রকাশিত হতো না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। তারপর থেকে শিশু পাতাতেই নিয়মিত লিখতে শুরু করলাম।



    বাংলা বই পড়তে আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো। এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় ব্যাকরণ বহুনির্বাচনীতে সবগুলো উত্তর হয়েছিল। বাংলা স্যার আমাকে খুব পছন্দ করতেন এবং ভালো লেখার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। লেখায় আমার ভুল সংশোধন করে দিতেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরিচয় হলো বিজ্ঞান বিষয়ক দ্বি-মাসিক 'বিজ্ঞান পাঠ'র নির্বাহী সম্পাদক এর সাথে। একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি বিজ্ঞান বিষয়ে আমার আগ্রহ অনেক। তিনি আমাকে বিজ্ঞান পাঠ এ লেখা পাঠাতে বললেন। আমি তখন বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পাঠালাম। পরবর্তী সংখ্যায় ভালো ভালো লেখকদের সাথে আমার লেখা স্থান করে নিলো। 


    নিজের লেখা দেখে তখন আমি অনেক বিস্মৃত হয়েছিলাম। বিজ্ঞানপাঠ­'র উপদেষ্টা পর্ষদে আছেন অধ্যাপক অজয় রায় স্যারের মতো দেশবরেণ্য শিক্ষক। তারপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়। গল্প পাঠাই 'আলোকিত বাংলাদেশ' পত্রিকাতে। গাজী মনসুর আজিজ ভাই গল্প লেখাতে আমার ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেন এবং শিশুতোষ গল্প লেখার প্রতি অনুপ্রাণিত করেন। দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় শিশুতোষ গল্প প্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় দৈনিকগুলোতে লেখালেখি শুরু। তারপর থেকে অন্যান্য পত্রিকাগুলোতে লেখা প্রকাশিত হয়। এভাবেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ আরো বাড়তে থাকে। শিশুতোষ গল্প লেখার পাশাপাশি প্রযুক্তি ও ফিচার বিষয়ে লেখার চেষ্টা করি। ফলশ্রুতিতে স্থানীয় একটি পত্রিকার শিশু পাতার কয়েকটি সংখ্যার বিভাগীয় সম্পাদনা করি। তবে পড়াশুনার কারণে নিয়মিত তা করা হয়ে ওঠে না। বই করার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই। সামনে এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তাই এবারের বইমেলায় বই করা হয়ে ওঠেনি। তবে আসছে বছর দু'টি বই বের করব সেই প্রত্যাশায় আছি।    



    জীবনটা খন্ড খন্ড কিছু গল্পের সমাহার। আবার গল্পটাও জীবন থেকেই সৃষ্টি। বিচিত্র এই জীবনে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন গল্প। প্রত্যেক মানুষের রয়েছে নিজের কতগুলো গল্প। সেখান থেকেই আমার লেখালেখি শুরু করার পেছনের গল্পটুকু শুনালাম। আসলে আমি এখনো পুরোপুরি গল্পকার হয়ে উঠিনি। তাই গল্পের ছলে পুরো বিষয়টিকে রসপূর্ণ করতে পারলাম না। তবে গল্পকার হওয়ার নিরন্তর সাধনা করি। লেখালেখি নিয়ে পাড়ি দিতে চাই অনেক পথ।
    জয় হোক তারুণ্যের।।

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad

    ad728
    Powered by Blogger.